"পাওয়া না পাওয়ার হিসাব" এর ডাইরি ০৪ এর ৫৬ নং পৃষ্ঠা।

 "পাওয়া না পাওয়ার হিসাব" এর ডাইরি

ডিপ্রেশন রোগী🤕🤕, নাপা এক্সা মেক্স প্রো🙄🙄


প্রত্যেকের জীবনে অনেক মানুষ ভিড় জমায়। কারোরটা বেশি আবার কারো কারো কম। চারপাশে নানানরকম চেহারা চোখে পড়ে। তারমধ্যে পরিবারের বাদ দিয়ে "পাওয়া না পাওয়ার হিসাব" এর ডাইরি বলতে গেলে আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশি, সমবয়সী, সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক, সহকর্মীসহ আরো অনেক রকমের মানুষ আসে। এই নানান প্রকার মুখ থেকে কিছু মানুষকে আপন করে নিতে হয়। আবার কিছু মানুষকে খুব আপন। এককথায় নিজের মনের মতো করে গোপনে একটা সম্পর্কের ছক তৈরি করতে হয়। তারপর ধাপে ধাপে কাছে আসা মানুগুলো দিয়ে সম্পর্কের ছকটা পূরণ করতে হয়। অবশ্যই এই কাজটা কেউ করতে চাই না গুটিকয়েক ছাড়া। ছোটবেলা থেকে আমার বদভ্যাস হলো সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করানো তারপর বিবেচনা করা। আজ আমার সাজানো সম্পর্কের ছক থেকে একটি ক্ষুদ্র অংশ লিখতে বসলাম। 

দিনটা ছিলো বুধবার, ২৫ আগস্ট ২০২১ইং। চারদিকের আকাশ কেমন জানি মেঘের সাথে অভিমান করে কালো হয়ে রইলো। একটু বৃষ্টি আর একটু থামে। আবার গাছ ফাঁটা রোদ। এককথায় আবহাওয়া অস্বাভাবিক। আমার অবস্থান ছিলো কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার এক প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় যেখানে একদিকে নেটওয়ার্কের সমস্যা অন্যদিকে আশেপাশে ৩/৪ কিলোমিটারের মধ্যে কোন দোকান নেই। মোবাইলে ব্যালেন্স শুন্য হলেও ৫৩.৫এমবি ইন্টারনেট ছিলো। দুপুর ৩টার সময় গুগল ক্যালেন্ডার থেকে নোটিফিকেশন আসলো যে ৩টার সময় ক্লাইমেট চেইঞ্জ একশন এর একটা অনলাইন মিটিং আছে যেখানে উপস্থিত থাকবে রবার্ট বব। যদিওবা ইন্টারনেট সংযোগ খুবই দুর্বল তবুও ডাটা চালু করে যতসব চিন্তা শুরু। একদিকে এমবি নাই অন্যদিকে আশেপাশে দোকান নেই। একটু কষ্ট করে ডাটা চালু করে ৩জি নেটওয়ার্ক পেলাম একটা গাছের নিচে। সেখানে বসে কয়েকজন খুব কাছের মানুষকে মেসেজ দিলাম। বললাম, "আমি একটা সমস্যার মধ্যে আছি। আশেপাশে দোকান নাই। আমাকে ৩০টাকা রিচার্জ দিতে পারবে?" প্রায় ১০জনকে বলছিলাম। তারমধ্যে কয়েকজন মেসেজ দেখেও হ্যাঁ বা না কিছুই বললো না। ভাবলাম এত বিন্যাস তবুও সর্বনাশ। কেউ সাড়া দিল না। 

মিটিং শুরু হতে আর মাত্র ৩০ মিনিট। হুট করে মাথায় আসলো কয়েকজন মানুষের নাম যাদের সাথে পরিচয় হয়েছিল ভর্তি কোচিং এ গিয়ে। তবে বর্তমানে অনলাইন জগতে দিনে ৭ ঘণ্টা একটিভ থাকলে তাদের সাথে ৫ ঘণ্টা অবশ্যই মজা করি। তাদেরকে মেসেঞ্জার গ্রুপে মেসেজ দিলাম। গ্রুপের নাফা এক্সা মেক্স প্রো অর্থাৎ সাকিব সাড়া দিলো। তখন একটু শান্তি পেলাম। তারপর তাকে মোবাইল নাম্বারটা দিলাম রিচার্জ দেওয়ার জন্য। এরমধ্যে ডিপ্রেশন রোগীকে( সবুর) মেসেঞ্জারে কল দিলাম। রিসিভ করলো না। তারপর একটা ভয়েস দিলাম। তারপর ৫৩.৪ এমবি এগুলো শেষ। 

গাছের নিচে ছাতা নিয়ে রিচার্জের আশায় দাঁড়িয়ে আছি। তারপর সাকিব কল দিয়ে বললো সবুর টাকা দিচ্ছে। সাথে সাথে রিচার্জ মেসেজ দেখে খুশি হলাম। কথা শেষ হতে না হতে ডিপ্রেশন রোগী কল দিলো। কথা যা বলাম তা বাঁশ দিয়ে শেষ করে একটা ওয়াটারপ্রুফ পড়ে মিটিং করলাম। মিটিং শেষ করে তাদের কাউকে ধন্যবাদ না দিয়ে এসএমএস দিলাম, " আজ নেটওয়ার্কের বাইরে বলে তোদেরকে মাদারবোর্ড দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে মাদারবোর্ড ডিভিশন আন্তরিকভাবে দুঃখিত।"

বিপদের সময় সবাইকে কাছে পাওয়ার আশা করা বোকামি। যাদেরকে কাছে পাবে মনে করবে হয়তো তাদেরকে নাও পেতে পারো। আবার যাদেরকে কখনও কাছে পাবে এটা আশা কর নাই তাদেরই হয়তো কাছে পাবে। এটাই জীবন। তাই বলে যারা বিপদের সময় সহযোগিতা করতে পারে নাই কিংবা করে নাই তাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না। ডাইরির পাতায় তাদের নামটা লিখে রাখতে হবে। কারণ যারা আজ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সহযোগিতা করে নাই তাদের জন্যই আপনি যাদেরকে সম্পর্কের ছকে নিচে রাখলে তাদেরকে বিবেচনা করতে পেরেছ। সবসময় দুইটা ডাইরি রাখতে হবে। একটাতে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব আর অন্যটাতে বিপদের সময় পাশে থাকা আর এড়িয়ে যাওয়া মানুষের নাম।

[বি.দ্রঃ কাউকে অবহেলা করবেন না। এতে পাথরের আশায় হিরা হারিয়ে ফেলবেন ]

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post