ভাবনায় মধুর পর্বঃ-০২

 প্রথম পর্বের পর...



রাত ৯টা কি ১০টা। বিছানায় শুয়ে আছি আর লক্ষ্যহীন চিন্তা-ভাবনার মধ্যে কেমন জানি অন্যমনস্ক হয়ে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাবনার এক মুহূর্তে বড় আপু চা নিয়ে আসে আর বলে “অন্যমনস্ক হয়ে শুয়ে না থেকে চা খেয়ে অন্তত পড়তে বসলে তো হয়”। তখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে সেখানেও হেসে পাশ কাটিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে ইথিক্যাল হ্যাকিং-এর জগতে হারিয়ে যায়। অনলাইন জগৎও কেমন জানি ভালো মতো সময় কাটানোর একটা আড্ডাখানা হয়ে গেছে। হ্যাকিং আড্ডার মাঝখানে মেসেঞ্জার টিং করে উঠলো। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও একটু ঢুকে দেখি ‘‘কিরে কি অবস্থা? আজ সারাদিন গ্রুপে আসলি না ক্যান?” মেসেজটা দেখে গ্রুপে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা শুরু করি। আড্ডার মাঝে একটু কলেজ গ্রুপে গিয়ে সবার মেসেজগুলো পড়তেছি কিন্তু কোন মেসেজ দিচ্ছি না। এরই মাঝে একজন  ম্যানশন দিয়ে চুপ থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলে সবকিছু বাদ দিয়ে নতুনদের মাঝে হারিয়ে গেলাম। তার মাঝে কয়েকজন ছাড়া অবশ্যই সবাই নতুন। আড্ডার এক পর্যায়ে যারা একটিভ তাদেরকে ম্যানশন দিয়ে তাদের খবর নিচ্ছিলাম। এমন সময় দেখলাম তাদের মাঝে সেও মেসেজ দেখতেছে কিন্তু কোন কথা বলতেছে না। তাই তাকে একটু ম্যানশন দিলাম। যেই মেনশন দেওয়া সেই শুরু রিয়েক্ট। কেউ হাহা, কেউ উও😮 রিয়েক্ট। অবশ্যই তাদের মধ্যে তানজিমের নাম সবার আগে বলতে হয়। 

কারণ, আমরা একসাথে একই কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলেও পরিচয় হয়নি। কিন্তু এই করোনাকালীন সময়ে ভর্তি সংক্রান্ত ও যাবতীয় তথ্য দিয়ে সবাইকে সহযোগিতা করে। ধীরে ধীরে সবার সাথে যোগাযোগ হয়। করোনার মহামারির ধাক্কায় যদিও আমরা প্রায় নির্জীব তবুও সবাই ভার্চুয়াল জগতে কিছুটা আনন্দময় সময় কাটাচ্ছিলাম।

সীমিত পরিসরে ক্লাস শুরু হলে যে ক'জন ক্লাস করতে আসতো তাদের সবার সাথে আড্ডা এবং ক্লাস দুই-ই ভালো যাচ্ছে। কারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যেই পড়ালেখা হচ্ছিলো। আনোয়ার জাহেদ স্যারের স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, নাছির স্যারের সিরিয়া, মিশর ও উত্তর আফ্রিকা এবং মুন্নী ম্যামের স্পেনের মুসলমানদের ইতিহাস ক্লাসগুলো আমাদের প্রাণবন্ত করে তুলছিল। বিশেষ করে মুন্নী ম্যাম। ম্যাম আমাদেরকে শিক্ষাগুরুর জায়গা থেকে কিছুটা স্থান পরিবর্তন করে বড় বোনের মতো করে খুব কাছ থেকে পড়াতো। যেকোনো বিষয় নিয়ে দিকনির্দেশনা দিতো। আমার এখনও মনে আছে ম্যাম বলছিলো, "প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে যদি ভালো রেজাল্ট করতে না পারো তাহলে পরে গিয়ে ভালো রেজাল্টের আশা করা যাবে না"। আমি এখনও সেই কথাই পথ চলি।

ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিকেল ৪টা কি ৫টা হবে; আমি টিউশনি এবং সাংগঠনিক কাজের বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সাথে সৈকতে আড্ডা দেওয়ার সময় একটা চিপসের প্যাকেটে একটা ব্যান্ড পেলাম। ওটা অবশ্যই মেয়েদের। কলেজ গ্রুপে ছবি তুলে দিয়ে সেটা নিয়ে মজা শুরু। কারণ সেখানে দু'টি নামের অক্ষর ছিল। বললাম, " এটা কার জন্য নিবো?" জিহান অবশ্যই নিজের নামের সাথে মিল থাকায় তার জন্য রাখতে বলে। আর এদিকে মেসেজ দেখে চুপ মেরে আছে কয়েকজন। মেনশন দিতেই কাহিনি শুরু। অর্থাৎ ট্রল করা শুরু হয়ে গেছে। অবশ্যই যারা চুপচাপ থাকে তাদেরকে একটু কথা বলাতে পারলে ভালো লাগে। আর সেই ভালো লাগাটা সবাই ভেবে নিলো ভালোবাসা। আমিও সবার কথা মজা হিসেবে নিলাম।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post