"অল্পতে রক্তক্ষরণ " লেখক আবদুল নবী


অল্পতে রক্তক্ষরণ

আবদুল নবী    

ভালোবাসার ভাবনাচিন্তা নিজের মধ্যে বসতি স্থাপন করছে একজনকে নিয়ে। রাতের পরে দিন আবার দিনের পর রাত সবসময় একসাথে মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ঘুমন্ত ভালোবাসার অনুভূতি এবং চাওয়া পাওয়ার সবকিছু তার সাথে ভাগাভাগি করে দিন চলে। কোন কারণে ৫ মিনিট কিংবা ১০ মিনিট একসাথে থাকতে না পারলে মনে হয় যেন কয়েক বছর ধরে কথা হচ্ছে না দেখা হচ্ছে না। মনের মানুষের জন্য এতো ভাবনা মনের মধ্যে সৃষ্টি হয় তা জানা ছিলো না। ভালো লাগা আর ভালো থাকা দুটো আজ তাার হাতে। কারণ দেহটা আমার কাছে থাকলেও মনটা তার হাতে। এ দেহের নিয়ন্ত্রণ আজ হাত ছাড়া হয়ে গেলো। রাতদিন একসাথে থাকতে থাকতে যখন শরীর বেশি অচল হয়ে যায় তখন একটু ঘুমোতে যাওয়ার চেষ্টা করলে সেটা বৃথা যেতো। মনে হতো এই যেন সে আমাকে ডাকতেছে ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে। আর ঘুমানো হয় না।

মাঝেমধ্যে যখন তাকে ছাড়া থাকতে হবে এরকম শুনি তখন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এখন ঠিক সেটাই হচ্ছে। ব্যস্ততার মধ্যে আজ ৪ দিন হলো সে আ

আমার থেকে দুরে আছে। কথা হয় না, খবর নেওয়া হয় না। ঠিক যেন মরুভূমির মরীচিকার মতো। ভালোবাসা মানে যে শুধু আত্মচিৎকার তা কিন্তু সত্যি না। ভালোবাসার মাঝে অনন্য এক সুখের হাওয়া আছে যা খুঁজে নিতে হয়। আমিও খুঁজে পেয়েছিলাম সেই হাওয়া। কিন্তু সেই হাওয়া আমি নিজের আয়ত্তে আনতে ব্যর্থ। কারণ, ভালোবাসার হরিণীর কাছে সেই হাওয়া জমা রেখে তার থেকে একটু একটু করে নিয়েই আমার জীবন চলা।

একাকিত্বের কোন ছায়া আমার কাছে ঘেষতে দেয় না সে। এতো ভালোবাসার মাঝেও তাকে একটু চোখের আড়াল করে আমি থাকতে পারি না। ১৯ আগস্ট থেকে শুরু হলো রক্তক্ষরণ। অর্থাৎ সে পারিবারিক নিয়ম মতো সবার সাথে চলে গেলো বিয়ে বাড়িতে। বিয়েটা অবশ্যই খালাতো ভাইয়ের। আজ ২২ আগস্ট ৪ দিন হয়ে গেলো। এই ৪ দিনে তার সাথে ৩ বার কথা হয়ছে ৬ টা এসএমএস দিয়ে। ১৯ তারিখ যেদিন চলে যাচ্ছে সেদিন ২টা এসএমএস আবার ২০ তারিখ ২ টা। অবশ্যই ২০ তারিখ কিছুটা সময় একসাথে কাটিয়েছি। তাকে বাড়ি থেকে বিয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে গিয়ে অনেকটা ভালো লেগেছিলো। কিন্তু সেই গাড়ি থেকে নামার পর থেকে আবারও এতোটা ব্যস্ত হয়ে গেলো যে একটিবারের মতো খবর নেওয়া হলো না। অথচ তাকে পৌঁছে দিয়ে আসার সময় আমার জীবনে এক বড় অধ্যায়ের শুরু হতে যাচ্ছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেদিনের মতো বেঁচে গেলাম। কিন্তু বুঝতেই দিই নাই কিছু হয়েছে সেটা। বাড়িতে একা একা ভালো লাগতেছে না। ইচ্ছে হচ্ছে তার কাছে চলে যেতে। কিন্তু পারিবারিক রীতিনীতি সেখানে বাঁধা। ঘুমাতে গেলে ঘুম আসে না। পড়ায় মন বসে না। এককথায় জীবনে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হলো তাকে ছাড়া। সেদিন অনেক ব্যস্ত থাকায় খবর নেওয়া হলো না। আর আমারও কিছু ভালো লাগতেছে না। রাত ৮ টার সময় একা একা চলে গেলাম স্মৃতিবিজড়িত একটি জায়গায় যেখানে দু'জনে একসাথে অনেকটা সময় কাটাতাম। আমি আমার জায়গায় বসে তার বিপরীতে চেয়ে আছি যেখানে সে বসতো আর ঝগড়া করতো। চেয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ মনে হলো সে বসে আছে আর আনমনে চেয়ে আছে সগরের ঢেউয়ের প্রতি। রাত গভীর হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি। ওখানে বসে থাকতে একটি বারও মনে হয় নাই যে আমি আসলে একা। রাত প্রায় ১১ঃ৫০মিনিট( কমবেশি হতে পারে) একজন ট্যুরিস্ট পুলিশ আমাকে দেখে এসে জিজ্ঞেস করলো এতো রাতে কি করতেছি। মনের একাকিত্বের ভালো না লাগার কথাটাই বললাম। এরপর তার সাথে অনেকক্ষণ  বসে কথা হলো। মনের কিছু অব্যক্ত কথা ঐ পুলিশ বের করে দিলো বৃষ্টির এই রাতে। গভীর রাত হয়ে গেলো। চলে যাওয়ার মতো গাড়ি পাচ্ছি না। অনেকক্ষণ দু'জনে একসাথে হেঁটে হেঁটে একটা টমটম পেলাম। আর সেটা নিয়ে অবশেষে বাড়ি ফিরলাম। 

২১ আগস্ট সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গতে সময় লাগলো। বেলা ১১টা। ওঠে অনেক্ষণ তার কথা ভাবলাম আর কোন কল কিংবা এসএমএস দিলো কিনা। দেখলাম তাও দেওয়ার সময় পেলো না। অবশ্যই সেদিন জুমাবার ছিলো। তাই গোসল করে সবকাজ করে আপুর ছোট্ট বাবুকে নিয়ে মসজিদে চলে গেলাম। নামাজ পড়ে বাড়ি এসে কিছু খেতে না খেতে আবার সবকিছু চোখে ভেসে আসলো। বিছানা ঠিক করে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ব্যর্থ হলাম। তারপর বিকেলে চলে গেলাম আমার নিজের একটা জায়গায় যেখানে মন ভালো না থাকলে একা একা বসে সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। গত ৪ বছর ধরে সেই জায়গাটা আমার বন্ধু হয়ে গেলো। কিন্তু ২০২০ সালের ৭ই মার্চ হতে তার সাথে বন্ধুত্বের অবসান ঘটে। আবারও মন ভালো না থাকায় তার কাছে ফিরে আসলাম। প্রকৃতির কিছু সৌন্দর্য, সাগরে নৌকা চলাচল, নৌকায় করে মানুষ মহেশখালী আসা-যাওয়া এসব দেখে দেখে মনটা একটু ভালো করার ব্যর্থ  চেষ্টা চালাতে থাকি আর কিছু একাকিত্বের প্রকৃতির ছবি তুলি। এভাবেই দিন গেলো। একটি বারের মতো সেদিন একটু খবরও পেলাম না সে কেমন আছে সেটা। এমন একটা অবস্থায় আছি যা সহ্যও করা যাচ্ছে না আবার বুঝানোও যাচ্ছে না। প্রতিদিন রাত ১২ টার পরে অনলাইনে তার সাথে কিছুটা সময় কাটাতাম যা অনেকটা স্বরণীয়। আজ সে নেই তবুও সেই সময়টাতে অনলাইনে থাকি। ঠিক যে সময়ে শুরু এবং শেষ হতো ঠিক সেই সময় পর্যন্ত থাকি। কিন্তু দেখা মিলে না।

আজ ২২ আগস্ট। রক্তক্ষরণের ৪র্থ দিন। তবে সকালে তার দুটো এসএমএস পেয়ে মন কিছু স্থির হয়েও মন এলোমেলো হয়ে গেলো। যে জায়গায়  একে অপরকে ছাড়া এক মুহুর্ত ভালো থাকতে পারতাম না সেই জায়গায় আজ সে বললো ওখান থেকে চলে আসতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তখন নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে একাকিত্বের সাথে বৃষ্টিতে ভিজতেছি সেই আমার ভালো লাগার জায়গায়। সে আসবে বলে অপেক্ষায় আছি.....

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post