সন্ধ্যা ৭টা। বাইরে হালকা হালকা বৃষ্টি আর আমি ছাতা নিয়ে রাস্তায় হাঁটছিলাম। মাঝপথে পারফিউমের ঘ্রাণে আমি দাঁড়িয়ে যায়।কারণ পারফিউমের ঘ্রাণটা বেশ পরিচিত। চারপাশে একনজরে অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখছি কিন্তু কেউ নাই। তখন কেমন জানি মনে হলো সে আমার পাশে এসে চুপিচুপি বলছে, ‘‘এই যে শুনছো, তোমার সাথে ঝগড়া হওয়ার পরও ঠিকই আমার ঘ্রাণে তুমি আমাকেই খুঁজলে। এটাকে কি বলবে? ভালোবাসা নাকি অন্যকিছু? অন্যকিছু হলে সেটার নাম কি হতে পারে?” এমন সময় এক পথচারীর ধাক্কায় স্বাভাবিক হতেই দেখি সেই ঘ্রাণও নাই; সেই সাথে তার প্রশ্নোত্তরও বন্ধ।
ধাক্কার জোরে আমার পথচলা। স্বাভাবিকভাবে রাস্তা পার হতেই পিছন থেকে ডাক দিলো, ‘‘আমি একা রাস্তা পার হতে পারবো না। আমাকে নিয়ে যাও, প্লিজ”। তার কথা শুনে রাগ করে পিছনে ফিরতেই টমটমের সাথে ধাক্কায় আমি প্রায় অস্বাভাবিক হয়ে যায়। কাপড়চোপড় প্রায় নষ্ট হয়ে যায় আর আমি কোনো রকম ওখান থেকে উঠে মসজিদে গিয়ে ফ্রেশ হয়। আবারও যাত্রা শুরু। কারণ দৈনন্দিন কাজের গন্তব্যে আমার যাত্রা।
নিজের হ্যালুসিনেশন হচ্ছে বুঝতে পেরে রিকশা করে যাচ্ছিলাম। হুট করে হারিয়ে যায় ভাবনার জগতে। গত দু’দিন আগেও একসাথে এই রাস্তায় হেঁটেছি। অথচ আজ আমাদের মধ্যে অসীম দূরত্ব। এই তো সেদিন বাসা পরিবর্তন করে নতুন বাসায় উঠার সময় দু’জন একসাথে বাসা সাজিয়ে তারপর এই রাস্তা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছিলাম। বাজারে এসে বাসার জন্য কি কি লাগবে সেটা নিজেই যখন বলতে পারিনি তখন বললো, ‘‘আজীবন বলদই থেকে যাবে”।
একজন আরেকজনকে সম্বোধন করার জন্য আমাদের পছন্দের নাম ছিলো গাদা, বলদ । সেদিন বাজারেও সবার সামনে সেটাই হলো। পরীক্ষার পর একসাথে রেস্টুরেন্টে খেতে বসা, বাসায় খেতে বসলে খাবার নিয়ে খোঁচা দেওয়া, সুপার শপে গিয়ে বাজারের লিস্ট থেকে আইসক্রিম বাদ দিতে গিয়ে রাগ, অভিমান করা, আইসক্রিম না আনায় ভাত না খেয়ে বিছানার একপাশে বসে থাকা আর আমি রাগ ভাঙানোর চেষ্টা না করা সবকিছুই মাথায় ভর করলো।
সকালে কাজে যেতে হবে তাই আমাকে একটু ভোরে ডেকে দিও। এই কথা বলে ঘুমানোর পর যখন সকালে ঘুম থেকে উঠি তখন দেখি সে চা খাচ্ছে আর এদিকে আমায় দাঁত ভেঙ্গাচ্ছে এমন সময় কে যেন শরীরে হাত দিয়ে ডাকলে ভাবনার ঘোর কেটে যায়।
রিকশা থেকে নেমে আবার পথচলা। সে থাকতে সবকিছু সময় মতো করতে হতো। সময় মতো খাবার, বাড়ি ফেরা, অসুখ হলে ডাক্তারের মতো হাজার খানেক ওষুধ কিনে আনতে বলতো। আরো কতো কি। আজ সেও নাই; আমার চালচলনেও বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে।
আজ শরীর বাহ্যিকভাবে ক্ষতবিক্ষত অথচ শরীরটা মেজে দেওয়ার জন্য কেউ নেই। এই ব্যথা তার শূন্যতা বুঝিয়ে দিলো। আজ সে থাকলে হয়তো বলতো, ‘‘রাস্তায় কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলে কে জানে! না হয় এরকম টমটমে গিয়ে পড়তে না”।