৭ম পর্বের পর...
অবশেষে সকাল হলো। সেই যে ঘুম ভেঙ্গেছে আর ঘুম আমায় স্পর্শ করতে পারেনি। অন্ধকার গিয়ে বাইরের পরিবেশটা আলোকিত হতে না হতেই আমি কাপড়-চোপড় পড়ে বের হয়ে যাবো এমন অবস্থায় পিছন থেকে ডাক...
-কোথায় যাচ্ছো এতো সকালে?
-হাসপাতালে যাচ্ছি। পরে এসে কথা বলবো।
-পরে বলতে কখন? আর হাসপাতালে কি জন্য? আগে নাস্তা করো তারপর বের হবে। না হয় সেই আবার কালকের মতো হবে।
-বললাম তো পরে এসে কথা হবে। আর তখন খাবো।
সে আর আটকালো না। চুপ মেরে থাকলো। আমি বুঝতে পারলাম জোর গলায় কথা বলায় সে দমে গেছে। বুঝতে পারলেও কিছু করার নাই। আমার একটাই লক্ষ্য হাসপাতালে যাবো আর আম্মুকে দেখবো। বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে।
রিক্সা থেকে নেমে হাসপাতালে ঢুকতেছিলাম। এমন সময় বামপাশে তাকাতেই আদি। হাতে খাবারের টিফিন, পানির বোতল আরো কিছু একটা আছে। ভাবতে গেলে এসব একা নিতে তার কষ্ট হচ্ছিল। কেমন জানি নিজেকে স্বার্থপর স্বার্থপর মনে হচ্ছে। আম্মুকে দেখার জন্য আমি ছটপট করতে করতে ভোর সকালে হাসপাতালে। সকালে যে আম্মু কিছু খাবে সেটা আর মাথায় নাই। অথচ আমার চেয়েও এই ব্যাপারে আরো বেশি সচেতনতা রয়েছে আদির।
কিছুক্ষণ আগেও বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এই মেয়ের কথা না শুনে অবজ্ঞা করে চলে আসছিলাম। এমনও হতে পারে সে খাবার আনার জন্য হয়তো আমাকেও খেয়ে আসতে বলছিলো। রক্তের এতোটা গভীর সম্পর্ক নাই তবুও এতো দায়িত্বশীলতার কাছে আমি হেরে গেলাম। যায় হোক, ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে বললাম...
-তোমার তো কষ্ট হচ্ছে। আমাকে কতগুলো দাও। তুমি একা পারতেছ না।
-কষ্ট হচ্ছে না। আর এখানে দরদ দেখাতে আসতে হবে না। আমি একা নিয়ে যেতে পারবো।
-আরে দাও। নিতে পারলে সেটা পরে দেখা যাবে। আপাতত আমাকে দাও।
-দিবো না। আমি নিয়ে যেতে পারবো। বাড়ি থেকে আমি একা একা আনলাম। আর এখন সে নিয়ে আমাকে উদ্ধার করবে। লাগবে কারো সহযোগিতা।
-আচ্ছা, যা হওয়ার তা বাড়িতে হবে। এখন শুধু শুধু এখানে সিনক্রিয়েট না করলে ভালো হয়। এখন টিফিন আমাকে দাও।
একটু জোর করলাম। আর টিফিন নেওয়ার চেষ্টা করতেই চোখ রাঙ্গিয়ে এমনভাবে তাকালো যে তা আর বলার মতো না। এতোদিন সে আমার উচুঁ আওয়াজেও ভয় পেতো। অথচ আজ তার চোখের ভাষা দেখে আমিই ভয় পেলাম। টিফিন ছাড়াই খালি হাতে আম্মুর কেবিনে ঢুকতেই আব্বু। আমার হাত খালি আর আদির হাতে টিফিন ও অন্যান্য জিনিসপত্র দেখার পর আব্বুর মাথা হঠাৎ গরম হয়ে যায় আর বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।....